রবিবার, ১৫ মে, ২০১৬

শতকরা ৮১ ভাগ ব্লাড ব্যাংকই অবৈধ, নেই আইনের প্রয়োগ

শতকরা ৮১ ভাগ ব্লাড ব্যাংকই অবৈধ, নেই আইনের প্রয়োগ


নিখিল মানখিন ॥ দেশে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। কমেনি পেশাদার রক্তদাতার সংখ্যাও। শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র অবৈধ। ব্যক্তিমালিকানাধীন শতকরা ৪৭ ভাগ কেন্দ্রে কোন পরীক্ষা ছাড়াই রক্ত পরিসঞ্চালনের কাজ চলে। দূষিত রক্তে এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি ও সি এর মতো মারাত্মক জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। রক্ত দান একটি মহৎ সেবা। রক্তের প্রয়োজনে জীবাণুমুক্ত নিরাপদ রক্তই রোগীকে নতুন জীবন দিতে পারে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ হেলথ বুলেটিনে দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৪১ বেসরকারী রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের (ব্লাড ব্যাংক) সর্বশেষ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকায় বাইরে থাকা ব্লাড ব্যাংকগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। সাধারণ মানুষের উচিত হবে ওই সব অবৈধ ব্লাড ব্যাংক এড়িয়ে চলা। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্লাড ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় কিনা তাও মনিটর করা হবে। দেশে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও বাঁধনের নাম। প্রতিবছর তারা বিভিন্ন হারে রক্ত সংগ্রহ করে থাকে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের মাধ্যমে। গত ২০০১ সালে এই চার সংগঠনের মাধ্যমে সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার ৫৬৮ ব্যাগ। ২০০৯ সালে সংগ্রহ করা হয় ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৫০ ব্যাগ। ২০০৯ সালে বাঁধন ৪৮ হাজার ২৫৩, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ৪৩ হাজার ৯০১, সন্ধানী ৩৪ হাজার ৭৩৩ এবং রেড ক্রিসেন্ট ২৫ হাজার ৬৬৩ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে। ২০০৮ সালে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ৫৯ হাজার ৫২৬, বাঁধন ৪২ হাজার ৯৬৬, সন্ধানী ৩২ হাজার ৫৬ এবং রেড ক্রিসেন্ট ২৫ হাজার ৬৬৩ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে। গত ২০১১ সালেও এই চারটি সংগঠন দেড় লাখ ব্যাগের বেশি রক্ত সংগ্রহ করে। 
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে দেশের সরকারী ব্লাডব্যাংক ও নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনগুলোতে রক্তদাতাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই ছিল পেশাদার। তবে ২০০১ সাল থেকে কার্যক্রম চালু হলে গত ৯ বছরে দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তায় সরকারের এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০০৯ সালে ওই হার নেমে এসেছে শতকরা ৯ ভাগে। ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৪৬টি এসবিটি কেন্দ্রের মাধ্যমে পাওয়া ১৮ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ ইউনিট (ব্যাগ) রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৫৮২ ইউনিট রক্ত বাতিল বলে গণ্য হয়। বাতিল হওয়া ওই পরিমাণ রক্তের মধ্যে ১০৭ ইউনিটে এইচআইভি, ১ হাজার ৬৩ ইউনিটে ম্যালেরিয়া, ৫ হাজার ৫৯৮ ইউনিটে সিফিলিস, ২ হাজার ১৪৭ ইউনিটে হেপাটাইটিস সি ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫৬৭ ইউনিটে হেপাটাইটিস বি পাওয়া যায়। ওই দূষিত রক্ত কাউকে প্রয়োগ করা হয়নি। গত ২০১১ সালেও পেশাদার রক্তদাতার সন্ধান পাওয়া গেছে। 
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, দেশের শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র অনুমোদনহীন। রক্ত সংগ্রহের সময় বাধ্যতামূলক পাঁচটি পরিসঞ্চালন সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয় না শতকরা ৫০ ভাগ কেন্দ্রে। রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত লোকদের শতকরা ৭৪ ভাগ নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন না। এ সব কেন্দ্র থেকে সরবরাহকৃত রক্ত গ্রহণে সব সময় ঝুঁকি রয়ে যায়। আশঙ্কা থাকে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আর বেসরকারীভাবে গড়ে ওঠা ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত পরিসঞ্চালন হয় এমন অধিকাংশ রক্তই মাদকসেবীদের বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্রতিনিয়ত অনাকাক্সিক্ষত সড়ক দুর্ঘটনা, মায়ের প্রসবজনিত জটিলতা, ক্যান্সার, লিউকিমিয়া এবং থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর জীবন রক্ষার্থে রক্তের প্রয়োজন হয়। তবে রক্ত যেমন একদিকে জীবন রক্ষা করে, অন্যদিকে অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনে এইডস, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-বি, সিফিলিস ও ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এ সব জটিল রোগ থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে পেশাদার রক্তদাতা থেকে রক্ত গ্রহণে বিরত থাকা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে রক্ত গ্রহণ করা।