রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬

রক্তদান সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী

রক্তদান সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী

টিউন করেছেন : প্রোগ্রামার রোমেল

রক্তের প্রয়োজন যাদের:
১. দূঘর্টনাজনিত রক্তক্ষরণ -
দূঘর্টনায় আহত রোগীর জন্য দূঘর্টনার ধরণ অনুযায়ী রক্তের প্রয়োজন হয়।
২. দগ্ধতা -
আগুন পুড়া বা এসিডে ঝলসানো রোগীর জন্য পাজমা/রক্তরস প্রয়োজন। এজন্য ৩-৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
৩. অ্যানিমিয়া -
রক্তে R.B.C. এর পরিমাণ কমে গেলে রক্তে পযার্প্ত পরিমাণ হিমোগোবিনের অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হয়। হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়াতে R.B.C. এর ভাঙ্গন ঘটে ফলে
৪. থ্যালাসেমিয়া -
এক ধরনের হিমোগোবিনের অভাবজনিত বংশগত রোগ। রোগীকে প্রতিমাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়।
৫. হৃদরোগ -
ভয়াবহ Heart Surgery এবং Bypass Surgery এর জন্য ৬-১০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
৬. হিমোফিলিয়া -
এক ধরনের বংশগত রোগ। রক্তক্ষরণ হয় যা সহজে বন্ধ হয় না, তাই রোগীকে রক্ত জমাট বাধার উপাদান সমৃদ্ধ Platelete দেয়া হয়।
৭. প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ -
সাধারণত প্রয়োজন হয় না তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ১-২ বা ততোধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
৮. ব্লাড ক্যান্সার-
রক্তের উপাদানসূমহের অভাবে ক্যান্সার হয়। প্রয়োজন অনুসারে রক্ত দেয়া হয়।
৯. কিডনী ডায়ালাইসিস -
প্রতিবার ডায়ালাইসিস-এ ১ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
১০. রক্ত বমি -
এ রোগে ১-২ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
১১. ডেঙ্গু জ্বর -
এ রোগে ৪ ব্যাগ রক্ত হতে ১ ব্যাগ Platelete পৃথক করে রোগীর শরীরে দেয়া হয়।
১২. অস্ত্রপচার -
অস্ত্রপচারের ধরণ বুঝে রক্তের চাহিদা বিভিন্ন।
রক্তদানের যোগ্যতা :
সাধারনত একজন সুস্থ ব্যাক্তি চার মাস অন্তর অন্তর রক্তদান করতে পারেন। এবার দেখে নেয়া যাক রক্তদানের যোগ্যতাসমূহ-
বয়স – ১৮-৫৭ বছর।
ওজন - ১০০ পাউন্ড বা ৪৭ কেজির উর্ধ্বে।
তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ( অনুচক্রিকা , রক্তরস ) ওজন ৫৫ কেজি বা তার উর্ধ্বে। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৭৫% বা তার উর্ধ্বে থাকলে। সম্প্রতি ( ৬-মাস ) কোন দূঘর্টনা বা বড় ধরনের অপারেশন না হলে।
রক্তবাহিত জটিল রোগ যেমন-ম্যালেরিয়া, সিফিলিস , গনোরিয়া, হেপাটাইটিস , এইডস, চর্মরোগ , হৃদরোগ , ডায়াবেটিস , টাইফয়েড এবং বাতজ্বর না থাকলে।
কোন বিশেষ ধরনের ঔষধ ব্যবহার না করলে।
চার মাসের মধ্যে যিনি কোথাও রক্ত দেননি।
মহিলাদের মধ্যে যারা গর্ভবতী নন এবং যাদের মাসিক চলছে না।
রক্তদান ও রক্ত দানের পর-
রক্তদানের আগে প্রতিটি রক্তদাতাকে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জিজ্ঞাসা করা হয়। সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে হবে। রক্তদাতার শারীরিক তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ীর গতি পরীক্ষা করা হয় এবং রক্তদাতার রক্ত জীবানুমুক্ত কি না তা জানার জন্য সামান্য রক্ত নেয়া হয়। এছাড়া এই রক্তের মাধ্যমে রোগী রক্তদাতার রক্তের মধ্যে কোন জমাটবদ্ধতা সুষ্টি হয় কি না তাও পরীক্ষা করা হয় (ক্রসম্যাচিং)। রক্ত পরীক্ষার পর কারও রক্তে এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস -সি, সিফিলিস বা অন্য কোন জীবানুর উপস্থিতি ধরা পরলে তাকে (রক্তদাতা) প্রয়োজেনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেয়া হয়।সূঁচের অনুভূতি পাওয়ার মাধ্যমে রক্তদান প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে সময় লাগে সবোর্চ্চ ১০ মিনিট। রক্তদানের পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে- যথেষ্ট বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা।রক্তদাতা প্রয়োজন মনে করলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে।রক্তদানের সময় মাথা- শরীর সমান্তরাল থাকতে হবে। দূর হতে রক্ত দিতে এলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। রক্ত দান করার পরে অবশ্যই নুন্যতম ৫ মিনিট শুয়ে থাকতে হবে। [রক্তের প্রবাহ সমগ্র শরীরে স্বাভাবিক হবার জন্য এটা অতীব জরুরী]। সাধারণত রক্তদান করার পর অতিরিক্ত দামী খাবার গ্রহনের প্রয়োজন নেই। তবে রক্তদানের পর সপ্তাহ খানেক স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য সময়ের দ্বি-গুণ পানি পান করতে হবে। কেননা একজন রক্তদাতা যেটুকু রক্ত দান করেন [সাধারণত ১ পাউন্ড] তার প্রায় ৬০ ভাগ ঐ সময়ের মধ্যে পূরণ হয়। শুধু লোহিত রক্ত কণিকা পূরণ হতে ১২০ দিন বা ৪ মাস সময় নেয়। রক্তদানের পর অবশ্যই তারিখ মনে রাখতে হবে। [প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই কার্ড সরবরাহ করে]।
বেশিরভাগ রক্ত দাতাই রক্তদানের পর কোন সমস্যা অনুভব করেন না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তদাতা তলপেটে ব্যাথা, দূবর্লতা, মাথা ঘোরা, সূঁচ প্রবেশের স্থানে ক্ষত লালচে দাগ এবং ব্যাথা অনুভব করতে পারেন। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে রক্তদাতা জ্ঞান হারাতে পারে বা মাংসপেশীতে খিচুনি ধরতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব সমস্যা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, কোন ঔষধের প্রয়োজন হয়না।
রক্তদানের সুবিধা:
প্রতি ৪ মাস অন্তর রক্ত দিলে দেহে নতুন BLOOD CELL সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুন বেড়ে যায়।
নিয়মিত রক্তদানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে বলে হৃদপিন্ড বিশেজ্ঞরা মনে করেন।
স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে আপনি জানতে পারেন আপনার শরীর রক্তবাহিত মারাত্মক রোগ যেমন-হেপাটাইটিস-বি, এইডস, সিফিলিস ইত্যাদির জীবাণু বহন করছে কিনা।
স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানসিক প্রশান্তি আসে।
রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো পৃথিবীর সবোর্চ্চ সেবার অর্ন্তভুক্ত।
তথ্যসূত্রঃ
বাঁধন
স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন

দুঃসময়ে রক্তদান, সতর্কতা এবং যা জানা জুরুরী

দুঃসময়ে রক্তদান, সতর্কতা এবং যা জানা জুরুরী



প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যুদ্ধ, ভূমিকম্প, হরতাল, দুর্ঘটনা নানা ভাবে আহত মানুষ অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মারা যায়। রোগীর অপারেশন করতে গেলে প্রয়োজন পড়ে রক্ত। মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে আসে রক্ত দেয় বাঁচিয়ে তোলে। সুস্থ মানুষের এই রক্ত দানের ফলে বেঁচে উঠে মৃত্যু পথ যাত্রী মানুষ। রক্ত দানের আগে রক্তদানের নিয়ম এবং সতর্কতাগুলো জেনে নেয়া দরকার।



কারা রক্ত দিতে পারবেন:

• শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ নিরোগ ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন

• রক্ত দাতার বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে

• শারীরিক ওজন ৪৫ কেজি বা এর বেশি হতে হবে। উচ্চতা অনযায়ী ওজন ঠিক আছে কিনা অর্থ্যাৎ বডি মাস ইনডেক্স ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে হবে।

• রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, পালস এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হবে
• শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ এ্যাজমা, হাপানি যাদের আছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না
• চর্মরোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে

এছাড়া রক্তদানের উপযোগিতা যাচাই করার জন্য কতকগুলো পরীক্ষা করা জুরুরি। যেমন: ১) এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা, ২) জন্ডিস, ৩) পালস রেট, ৪) রক্তচাপ, ৫) শরীরের তাপমাত্রা, ৬) ওজন, ৭) হিমোগ্লোবিন টেস্ট, ৮) ব্লাড সুগার বা চিনির মাত্রা পরিমাপ করা ৯) সেরাক ক্রিয়েটিনন, ১০) ইসিজি। পরীক্ষাগুলো খুব সাধারণ। তাই রক্ত দাতাদের আগে থেকে টেস্ট করে রাখা উচিত। বিপদের সময় যাতে বিলম্ব না হয়।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ৪ মাসে অন্তত একবার রক্ত দিতে পারেন। বাংলাদেশে প্রতি ৩ মাসে একবার রক্ত দেয়াকে নিরাপদ ধরা হয়। রক্তদাতা একবার রক্ত দিলে তার শরীরের ১০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ রক্ত কমে। কিন্তু এই পরিমাণ রক্ত অল্প সময়েই আগের মত হয়ে যায়। শরীরে সাধারণ ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তদাতা সাধারণত এক দফায় ৪০০-৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দিয়ে থাকেন। এই পরিমাণ রক্ত দেয়াতে দেহের উপর তেমন কোন প্রভাবই পড়ে না। তাই রক্ত দাতার অযথা ভয় ভীতির কোন কারণ নেই। তবে রক্ত দানের আগে এবং পরে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবশ্যই পালনীয়।

রক্তদানে বিশেষ সতর্কতা:

• রক্তদানের ৪ ঘন্টা আগে ভালোভাবে খাদ্যগ্রহণ করতে হবে। খালি পেটে রক্ত দান করা ঠিক নয়।

• এসপিরিন ও এ জাতীয় ওষুধ খাওয়া অবস্থায় রক্ত দেয়া যাবে না। রক্তদানের ৪৮ ঘন্টা আগে এমন ওষুধ বন্ধ করতে হবে।

• কোনরূপ এনার্জি ড্রিংক রক্তদানের ২৪ ঘন্টা আগে সেবন করা যাবে না।

• শরীরে কোন উল্কি বা ট্যাটু করানো হলে বা নাক কান ফুটো করানো হলে ২-৪ সপ্তাহ পর রক্ত দিতে হবে।
• অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা অবস্থায় রক্ত দেয়া উচিত না।

বিষয়গুলো জুরুরী তাই রক্তদাতা কে অবশ্যই এগুলো মানতে হবে। একই সাথে রক্ত দেয়ার সময় যে সুঁচ ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিশ্চিত হয়ে নিবেন তা নিরাপদ কিনা। আপনার একটু অসাবধানতায় রক্তে বাসা নিতে পারে কোন মরণব্যাধির। তাই রক্তদান করতেও রাখা উচিত অতিরিক্ত সতর্কতা।

যারা রক্ত দিতে পারবেন না:

• ক্যান্সারের রোগী

• হিমেফিলিয়াতে যারা ভুগছেন

• যারা মাদক গ্রহণ করেছেন

• গর্ভবতী মহিলা
• অতিরিক্ত শ্বাস কষ্ট যাদের আছে
• যাদের এইচআইভি পজেটিভ তথা এইডস আছে
• যাদের ওজন গত ২ মাসে ৪ কেজি কমে গেছে

যারা নিয়মিত রক্তদান করেন তারা একটি কার্ড পান। পরবর্তীতে রক্তদাতার রক্ত প্রয়োজন হলে তিনি যাতে রক্ত পান সেজন্য। এখনকার বিশ্বে রক্তদান কে উৎসাহিত করা হয়। আর আমাদের মতন দেশে বিপদ আপদ দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৩২ মিলিয়ন মানুষ রক্ত দান করেন। ২০০৪ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ১৪ জুন এ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত হয়। রক্তদান একটি মানবিক কাজ। আপনার দেয়া রক্তে হয়তো একজন মুমূর্ষ রোগী বেঁচে যাবেন। মৃত্যুকে জয় করে এভাবে অসংখ্য মানুষ গাইবে মানবতার জয়গান।

Source: http://dhakatimes.com.bd