শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

রক্তদানের উপকারিতা

রক্তদানের উপকারিতা



বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এবং এই রক্তের একটা বড় অংশই আসে পেশাদার রক্ত বিক্রেতার কাছ থেকে। পেশাদার বিক্রেতাদের মাঝে একটা বড় অংশ আছে যারা কিনা বিভিন্ন রকম নেশায় কিংবা রগে আক্রান্ত। অনেক সময়েই নিরুপায় হয়ে এই দূষিত রক্ত গ্রহণ করে জটিল রোগে আক্রান্ত হন অনেক মানুষ, মৃত্যুবরণও করে থাকেন।তাই আপনি যদি নীরোগ ও সুস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপন বা পরিচিত জনদের প্রয়োজনের সময় রক্তদানে এগিয়ে আসতে পারেন। আবার আনেকেই মনে করে থাকেন রক্ত দানে শারিরিক কোন সমস্যা হতে পারে। কিন্তু জেনে নেওয়া ভালো যে রক্ত দানে কোন শারিরিক সমস্যা হয় না।
রক্তদানের উপকারিতা:
- রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কেননা রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। নিয়মিত রক্ত দান করলে অস্থিমজ্জা থেকে নতুন কণিকা তৈরির চাপ থাকে, ফলে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে। এতে যেকোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে হঠাৎ রক্তস্খলন হলেও শরীর খুব সহজেই তা পূরণ করতে পারে।
নিয়মিত রক্তদানে দেহে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন বা লৌহ সঞ্চয় প্রতিরোধ করে।
- নিয়মিত রক্তদানকারীর হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম
- রক্তদানের সময় রক্তে নানা জীবাণুর উপস্থিতি আছে কি না, তার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ফলে দাতা জানতে পারেন, তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কি না। নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে জানা যায় নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা।
- অনেক সময় রক্তদাতার শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
- সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রক্তদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
- রক্তে কোলেসটোরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে নিয়মিত রক্তদান।
- স্থূল দেহী মানুষদের ক্ষেত্রেও রক্তদান অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে ওজন কমাতে।
- সাধারণত যে সংস্থার কাছে রক্ত দেওয়া হয় তারা একটি ‘ডোনার কার্ড’ তৈরি করে দেয়। এই কার্ডের মাধ্যমে একবার রক্ত দিয়েই রক্তদাতা আজীবন নিজের প্রয়োজনে ওই সংস্থা থেকে রক্ত পেতে পারেন।
- মুমূর্ষু মানুষকে রক্তদান করে আপনি পাবেন মানসিক তৃপ্তি। রক্তদান একটি মহাকাজ, যা দাতাকে মানুষ হিসেবে বড় করে তোলে। রক্তদাতার বড় পাওনা—অসহায় বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচানো।
- মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয়—সব দৃষ্টিকোণ থেকেই দাতা অনাবিল আনন্দ অনুভব করেন; সামাজিকভাবেও বিশেষ মর্যাদা পান। গ্রহীতা আর তাঁর পরিবার চিরদিন ঋণী থাকে, তার জীবন বাঁচানোর জন্য। দাতার জন্য তা যে কী আনন্দের, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
- রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পুণ্যের বা সওয়াবের কাজ। ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ’-সূরা মায়েদা : ৩২। রক্তদানে অনেক উপকারিতা আছে, কিন্তু সেসব নিয়ত না করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করলে আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখেরাতে যে পুরষ্কার পাওয়া যাবে তা-ই সর্বোত্তম। ইসলামী সংগঠন রক্তদানের মাধ্যমে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে দাওয়াত দানের ক্ষেত্র তৈরী করতে পারে। ইসলামী সংগঠন সমাজের দ্বীনদার মানুষ, আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে সংগঠিতভাবে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: রক্তদান কোন কঠিন বা দুঃসাহসের কাজ নয় । ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যে কোন সুস্থ , নীরোগ মানুষ ( পুরুষের ক্ষেএে ওজন কমপক্ষে ৪৮ কেজি , মেয়েদের ক্ষেএে ওজন কমপক্ষে ৪৫ কেজি ) । প্রতি চার মাস পরপর এক ব্যাগ রক্ত দিতে পারেন । এতে আপনার শারীরিক ক্ষতির কোন সম্ভব না নাই ।রক্ত দানের জন্য সাধারণ খাওয়া-দাওয়ায় যথেষ্ঠ । তবে রক্তদানের আগে ও পরে একটু বেশী পরিমানে পানি পান করবেন । রক্তদানের পর কিছু সময় বিশ্রাম নিবেন । এরপর দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ করতে কোন বাধা নাই ।একজন মানুষের শরীরে থাকে সাড়ে ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত । এক ব্যাগ রক্ত দান করা মানে ৩৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দান করা । রক্তরস বা প্লাজমার অভাব পূরণ হয়ে যায় বেশী পরিমান পানি পানের মাধ্যমেই । লোহিত কণিকা ১২০ দিন পরপর প্রতিস্থাপিত হয় । অথাৎ আপনি রক্ত দিন বা না দিন,১২০ পর সেটি মরে যাই এবং নতুন লোহিত কনিকা জন্ম নেয় । বিশুদ্ধ রক্ত পাওয়ার আশায় আমাদের দেশের মানুষ সন্ধানী , রেড কিসেন্ট , অরকা, বাধন, কোয়ান্টাম প্রভূতি সংগঠনের দ্বারস্থ হয় । এসব সংগঠন কিন্তু রক্ত তৈরী করে না । স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের দান করা রক্ত সরবরাহ করার মাধ্যম হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান । মানুষ যত বেশী রক্ত দিবে , এসব সংগঠন তত বেশী বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করতে পারবে । তাই স্বেচ্ছায় রক্ত দানে এগিয়ে আসুন । আপনার রক্তে বেচে থাকুক একটি সম্ভবনাময় প্রাণ ।।।
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন